হুয়াওয়ের স্বপ্ন নিয়ে ট্রাম্পের ছিনিমিনি 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে যুদ্ধটা শেষমেষ বেধেই গেল। তবে সমারাস্ত্রের নয়। এ যুদ্ধ প্রযুক্তির।ট্রাম্প প্রশাসন বেশ আঁটঘাট বেঁধেই নেমেছে সে যুদ্ধে। তবে শেষ যাই হোক- এতে টেক জায়ান্ট হুয়ায়ের ভবিষ্যত যে হুমকির মুখে পড়েছে তা অনেকটা চোখ বুজেই বলা যায়।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউজ চাইনিজ মোবাইল কোম্পানি হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে একে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর ফলে হুয়াওয়ে এবং এর অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমতি ছাড়া পরবর্তিতে কোন আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। আর এরই রেশ ধরে ইতোমধ্যে হুয়াওয়ে টেক জায়ান্ট গুগলের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ও গুগল প্লে সার্ভিস ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হলো।

এটা হুয়াওয়ের চলার পথে একটি বিশাল ধাক্কা। কারণ হুয়াওয়ে ২০২০ সালের মধ্যে স্মার্টফোন বিশ্বের মোড়ল হতে বদ্ধপরিকর ছিল। এতদিন ধরে তারা সেই লক্ষ্যের দিকে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সব প্রযুক্তি কোম্পানিকে হুয়াওয়ের কাছে আমেরিকা সরকারের লাইসেন্স ব্যতিত কোন ধরনের প্রযুক্তি ও সেবা বিক্রয় থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তাদের এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার শীতল বাণিজ্য-যুদ্ধের পারদ নিঃসন্দেহে আরেকটু চড়িয়ে দিয়েছে।

সোমবার গুগলের এক মুখপাত্র এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা আদেশ পালন করছি এবং করণীয়গুলো পর্যালোচনা করছি।’ হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোনে ব্যবহৃত এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ও গুগল প্লে সার্ভিস এর আওতাধীন কিছু সফটওয়্যার সেবার জন্য গুগলের উপর নির্ভরশীল। ইতোমধ্যে সিলিকন ভ্যালি জায়ান্টটি তাদের এসব সেবাতে হুয়াওয়ের প্রবেশ বন্ধ করার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে গুগলের এই সিদ্ধান্তে হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তবে রয়টার্স জানিয়েছে গুগল এর এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের প্লে সার্ভিস ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাদের এন্ড্রয়েড ওপেন সোর্স প্রজেক্ট বা এওএসপি নামক এন্ড্রয়েডের পাবলিক ভার্সন তারা চাইলেই ব্যবহার করতে পারবে।

পাশাপাশি গুগল এক টুইটে জানিয়েছে যে, বর্তমানে গ্রাহকদের ব্যবহার করা এন্ড্রয়েড ফোনগুলোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা শিথিল আছে। গুগলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিদ্যমান ফোনগুলোতে গুগল প্লে এবং গুগল প্লে প্রটেক্ট এর সিকিউরিটি প্রটেকশন বলবত থাকবে।’ যদিও তাদের পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানা যায় নি এখনো।

অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সারা বিশ্বে পঞ্চম প্রজন্ম নেটওয়ার্ক চালুর ক্ষেত্রেও পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারন হুয়াওয়ে নিজেরা ৫-জি নেটওয়ার্ক স্থাপনকারী সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলোর একটি। তবে আপাতত হুয়াওয়ের জন্য গুগল সার্ভিস ছাড়া তাদের স্মার্টফোন বিক্রি করাটাই সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।

এটা ঠিক যে চীনে অনেক আগে থেকেই গুগল প্লে স্টোর ও সার্ভিস বন্ধ আছে। সেক্ষেত্রে তারা এগুলোর বিকল্প হিসেবে উইচ্যাট কিংবা বাইদু এর মতো চীনা অ্যাপগুলো ব্যবহার করে। তাই চীন নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু না থাকলেও অন্যান্য দেশের ব্যবহারকারীদের নিয়ে বেশ বিপাকেই পড়তে হবে হুয়াওয়ে কে। কারন তাদের মোট স্মার্টফোন বিক্রির অর্ধেকই আসে চীনের বাইরে থেকে। এছাড়া গ্লোবাল মার্কেটে গুগলের সার্ভিস ছাড়া চীনা অ্যাপগুলোর উপর মানুষ এখনো খুব বেশি ভরসা করতে পারে না।

অন্যদিকে এ ঘটনার পর হুয়াওয়ের প্রতিক্রিয়া নিয়ে মানুষের মাঝে উৎসাহের শেষ নেই। হুয়াওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তারা তাদের বিদ্যমান ফোনগুলোকে আগের মতোই সিকিউরিটি আপডেট দিয়ে যাবে। তারা এটাও জানিয়েছে যে তারা একই সাথে নিজেদের ফোনের জন্য নিজস্ব সফটওয়ার ইকোসিস্টেম বা অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করার কাজ অব্যহত রাখবে।

তবে হুয়াওয়ে ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করে এ নিষেধাজ্ঞার কিছু অংশ তিন মাসের জন্য শিথিল করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রস এক বিবৃতিতে বলেছেন, হুয়াওয়ের ওপর নির্ভরশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল্প ব্যবস্থা করতে সময় দেওয়ার জন্য নতুন করে এমন অনুমোদন দেওয়া হলো।  

 

 

 

টাইমস/এমএস/এফএফআর

 

 

 

Share this news on: